
হিমাদ্রিশেখর মণ্ডল, বাংলার চাণক্য নিউজ ডেস্ক,সুন্দরবন- : পুজো অর্চনা ও পরিবারের সদস্যদের চোখের জলের মাধ্যমে এ বছর সুন্দরবনে শুরু হল মধু সংগ্রহ অভিযান। মধু সংগ্রহের জন্য সরকারি অনুমতিপত্র হাতে পাওয়ার পরে সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন মধু সংগ্রহকারীরা। এই মধু সংগ্রহকারীদের মৌলে বলা হয়। জঙ্গলে যাওয়ার আগে তারা নিয়ম মেনে জঙ্গলের দেবতা বনবিবির কাছে পূজা ও প্রার্থনা করেন। নৌকোতেও পুজো করে তারপর মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জঙ্গলে রওনা দেন। এবছর ২ এপ্রিল থেকে মধু সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এই মধু সংগ্রহ অভিযান চলবে এক মাস ধরে। এর মধ্যে শতাধিক নৌকো সেই মধু সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনদফতর ও ব্যাঘ্র প্রকল্প মিলিয়ে প্রায় শতাধিক নৌকো এবার জঙ্গলে মধু সংগ্রহের জন্য আছে। এর মধ্যে বসিরহাট রেঞ্জ অফিস, সজনেখালি রেঞ্জ অফিস ও রায়দিঘি রেঞ্জ অফিস থেকে মধু সংগ্রহের জন্য রওনা হয়েছে মৌলেরা। সরকারিভাবে এবার মধু সংগ্রহের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাবেন মধু সংগ্রহকারী মৌলেরা। এতদিন মধু বিক্রি করে হাতে হাতে টাকা পেতেন মৌলেরা এবার সেই নিয়মে বদল আনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনদপ্তর এর আধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুন্দরবনে মধুর সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এবার সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে ভালোই ফুল ফুটেছে । আমরা আশা করছি সরকারিভাবে মধু সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে সেই লক্ষ্য মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হয় সেজন্য প্রত্যেক মৌলেকে বীমা করে দেওয়া হয়েছে।’বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে,এবার মোট ৫৫ টি দলকে মধু সংগ্রহের কাজে পারমিট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলের সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে সাতজনের মধ্যে। প্রথম পর্যায়ে ১৫ দিনের জন্য এই অনুমতি। নিয়ে তারা। জঙ্গলে প্রবেশ করেছেন ।সুন্দরবন বায়োস্পিকারের ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,জীবনের দাম সবকিছুর থেকে অনেক বেশি তাই মৌলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম কাজ। সমস্ত মৌলিদের ফোন নম্বর বনদপ্তরের কাছে রাখা হয়েছে এবং বনদপ্তর এর জরুরি নম্বর তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কারো কোন সমস্যা হলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন তাঁরা। সেইসঙ্গে মৌলিদের জন্য ইন্সুরেন্স এর ব্যবস্থাও করা হয়েছে, কেউ আহত হলে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ কারোর মৃত্যু হলে পরিবার পাবে পাঁচ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি মৌলদের বিতরণ করা হয়েছে মুখোশ, গ্লাভস এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ। সেই সাথে আবহাওয়ার – অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপডেট পেতে প্রতিটি দলের কাছে রেডিও থাকবে ।গতবারের তুলনায় এবার কেজি প্রতি পাঁচ টাকা করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে মধুর। বনদপ্তর মনে করছে এতে মৌলিরা কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। এবারে লক্ষ্য ১০ টন মধু সংগ্রহ।
তবে এবার বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সীমান্ত সংলগ্ন ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে মধু সংগ্রহের সময়। এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিক রাজেন্দ্র জাখোর সংবাদমধ্যমে জানান, ” ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীরা মধুর সংগ্রহকারীদের নিরাপত্তার জন্য জঙ্গলের মধ্যে টহলদারি দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বর্ডার লাগোয়া এলাকার নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। মৌলেদের সংগ্রহ করা মধু বনদপ্তর এর থেকে কিনে নেবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট কর্পোরেশন। সেই মধু পরে প্যাকেজিং করে ‘মৌবন’ নামে বাজার বিক্রি করবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট কর্পোরেশনকে দেওয়ার পরে বাড়তি মধু থাকলে তখন সেই মধু বনদপ্তর এর পক্ষ থেকে বাইরে বিক্রি করা হবে।”

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

খবর এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন:- ৯১৫৩০৪৩৩৮০