
শমী তরফদার, সন্দেশখালি:-বাংলার চাণক্য নিউজ:- প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের উত্তর২৪পরগণার সন্দেশখালি থানার দুর্গামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিমাদ্রি মিশন আয়োজিত শ্রীশ্রী শ্যামাকালী পূজা এবার ১৭ তম বর্ষে পদার্পণ করল। এই পূজায় অতিরিক্ত আড়ম্বর নয়, তবে অত্যন্ত ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে সকল রীতিনীতি মেনে প্রতিবছর এই কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যা আজকের যুগে বিরল। প্রত্যন্ত এই গ্রামের মানুষ নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক দলাদলি ও সমস্ত রকম বিভেদ ভুলে হিমাদ্রি মিশনের এই পুজোয় একত্রিত হন। বছরের এই কয়েকটি দিন মন খুলে একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলেন। একসঙ্গে বসে খিচুড়ি ভোগ খান। নিজের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আর গ্রামের মানুষ সারা বছর তাকিয়ে থাকেন বছরের এই কয়েকটি দিনের জন্য। এই কয়েকটি দিন হিমাদ্রি মিশন প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষের মিলন ক্ষেত্র।
উল্লেখ্য একটা সময় ছিল যখন এই গ্রামের পূজাপার্বণ তেমন হত না। গ্রামের মধ্যে দু’চার জায়গায় পুজো হতো কিন্তু সেখানে সবার প্রবেশ নিষেধ ছিল। বেশিরভাগ জায়গায় প্রভাবশালী লোক ছাড়া পুজোয় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল।এই প্রভাবশালীদের প্রভাব শুধু পুজো নয়, বিয়ে, অন্নপ্রাশন, এমনকি শ্রাদ্ধ বাড়িতেও বজায় ছিল। সেই জন্য হিমাদ্রি মিশনের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা কালীপুজো করবেন। যেখানে গ্রামবাসীদের সবার প্রবেশ থাকবে অবাধ। সবাই এই পূজা উপলক্ষে একত্রিত হবেন এবং মন খুলে পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলবেন। একসঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করবেন। আর তাই ২০০৮ সাল থেকে হিমাদ্রি মিশন এই শ্যামাকালী পূজা শুরু করেন। এখন গ্রামবাসীরা প্রতিদিন এক মুষ্টি করে চাল জমা করে রাখেন হিমাদ্রি মিশনের কালী পূজার জন্য। পুজোর আগে সেই চাল বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মিশনের সদস্যরা সংগ্রহ করেন। আর চাল দিয়েই নরনারায়ণ সেবার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক মানুষ এই নরনারায়ণ সেবায় খিচুড়ি ভোগ গ্রহণ করেন।
হিমাদ্রি মিশনের সভাপতি ডা: গিরীন্দ্র নাথ মণ্ডল বলেন, “কালী পূজা হল শক্তির আরাধনা। আর তাই গ্রাম প্রতিবেশী সকলের মঙ্গল কামনায় এই শ্যামাকালী পূজা করা হয়। শুধু মাত্র পূজা নয়, বহুবার পুজোর বাজেট ছেঁটে দু:স্থদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে হিমাদ্রি মিশন। আয়লা, আমফান, বুলবুল, ইয়াস- সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় আর্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে হিমাদ্রি মিশন। এছাড়া প্রতি বছর দুস্থদের মধ্যে নতুন বস্ত্র বিতরণ হয়। বিনামূল্যে চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। সুন্দরবন অঞ্চলের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে ‘সুন্দরবন সৃজন উৎসব’ এর আয়োজন করা হয়। সরকারি কোনও সাহায্য ছাড়াই সারাবছর এলাকার মানুষের পাশে থাকে হিমাদ্রি মিশন।”

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

খবর এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন:- ৯১৫৩০৪৩৩৮০