
সংগৃহীত ছবি—-
বিশেষ প্রতিনিধি,বাংলার চাণক্য নিউজ ডেস্ক:- – মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ১১তম প্রয়াণ দিবস আজ।সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক কিংবদন্তি নাম। অনন্য সৌন্দর্যের সঙ্গে ভুবনভোলানো আবেদনময় মিষ্টি হাসি আর অসাধারণ অভিনয়শৈলীর কারণে সুচিত্রা সেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মন জয় করেছেন।১৭ জানুয়ারি শুক্রবার মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ১১তম প্রয়াণ দিবস।
সুচিত্রা সেন নায়িকাদের নায়িকা, মহানায়িকা।প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আজ অবধি বাংলার মডেল কিংবা নায়িকারা সুচিত্রা সেনকে আইডল করে তার মতো শাড়ি পরেন, হাতাকাটা ব্লাউজ পরেন,চোখে কাজল টানেন,চুলে কখনো বেণী বাঁধেন কখনো বা খোঁপা সাজান কিংবা ঘাড় বাঁকিয়ে রোমান্টিক চাহনি দেন।
একজন সত্যিকারের সুপারস্টার জানতেন, জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতেই লাগাম টেনে ধরতে হয়, কখন থামতে হয়। সুচিত্রা সেন-ই জনপ্রিয়তার চূড়ায় যাওয়া সেই কিংবদন্তি নায়িকা, যিনি কেবল নিজের লাগাম টেনেই ধরেননি,অনন্ত যৌবনা ওতুমুল সম্মোহনী রূপের সৌন্দর্য দর্শক হৃদয়-মনের গভীরে গেঁথে দিয়ে নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়েছেন।
সুচিত্রা সেন সারা জীবন নিজের আশপাশে এক অদ্ভুত দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে রাখতে পেরেছিলেন,তা ভেদ করার কথা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ ভাবতে পারেনি।এমন অসম্ভব সাহসী, বেপরোয়া এবং দৃঢ়চেতা একজন সেলিব্রিটি সে যুগে বিরল ছিল। শুধু সে যুগে কেন?যুগে যুগে তার মতো সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা, দাপুটে অভিনেত্রীর জুড়ি মেলা ভার। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজ ব্যক্তিত্বের বলে বলীয়ান কজন হতে পারে?
তাকে নিয়ে যত না আলোচনা,যত না প্রশংসা, যত না বিশ্লেষণ,তার চেয়ে বেশি মিথ হয়ে ঘুরে-ফিরে আসে; যেন অনন্তকালের চিরযৌবনা রূপবতী সুচিত্রা সেনের মৃত্যু নেই।ভারত উপমহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি দীর্ঘদিন পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের দখল থেকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে পাবনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ওই বাড়িটি ‘কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করা হয়েছে।পাবনা জেলা শহরের পৌর এলাকার গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি।এ বাড়িতেই তার জন্ম। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর।
বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন সুচিত্রা।নবম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় ১৯৪৭ সালে কোলকাতার বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দীবানাথ সেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান মুনমুন সেন।
,১৯৫২ সালে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রথম পা রাখেন।প্রথম ছবি করেন ‘শেষ কোথায়’।তবে ছবিটি আর মুক্তি পায়নি।এরপর ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি করে সাড়া ফেলে দেন চলচ্চিত্রাঙ্গনে।
সুচিত্রা সেন বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন।তার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাস (১৯৫৫)।সুচিত্রা সেন ১৯৭৮ সালে প্রণয় পাশা ছবি করার পর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। এর পর থেকে তিনি আর জনসমক্ষে আসেননি।মাঝে একবার ভোটার পরিচয়পত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ছবি তুলতে ভোটকেন্দ্রে যান। সুচিত্রা সেন ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভক্ত।একবার তিনি গোপনে কোলকাতা বইমেলায় গিয়েছিলেন।সে সময় বলিউড-টালিউডের বহু পরিচালক সুচিত্রা সেনকে নিয়ে ছবি করতে চাইলেও তিনি এতে সম্মত হননি।এমনকি দেশ-বিদেশের কোনো পরিচালক বা অভিনেতা বা অভিনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎও দেননি তিনি।সেই থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যান।যদিও তার বাসভবনে তিনি কেবল কথা বলেছেন,তার একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেন এবং দুই নাতনি রিয়াও রাইমার সঙ্গে।
মহানায়িকার মহাপ্রয়াণ
দীর্ঘদিন অন্তরীণ থাকায় সুচিত্রা সেনের শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেননি। হঠাৎ নিজের লাগাম টেনে ধরেন এই চিরআবেদনময়ী সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রয়াণের আগে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে দক্ষিণ কোলকাতার বেসরকারিএকটি হাসপাতাল বেলভিউতে২০১৪ সালের১৭ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান মহানায়িকা সুচিত্রা সেন
তিন প্রজন্মের নায়িকা সুচিত্রা সেন। প্রেম,ভালোবাসাও শুদ্ধাচরণের দীপ জ্বেলেছিলেন সুচিত্রা সেন। রোমান্টিসিজমের যে ভেলা তিনি ভাসিয়েছিলেন সেই ভেলায় চড়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্তত তিন প্রজন্মের দর্শক। চলচ্চিত্রপ্রেমী আশি-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ থেকে ১৮বছরের তরুণও তার মৃত্যুতে যেন প্রেমিকা হারিয়েছেন।এপার বাংলার মেয়ে রমার এ মহাপ্রস্থানে দুই বাংলার তরুণরাও যেন হারিয়েছেন পাশের বাড়ির মিষ্টি মেয়েকে।২০১৪ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশেরএ মেয়েকে হারিয়ে অগ্নিপরীক্ষা’য় রাজি তরুণরা আজ শুধুই ‘হারানো সুর’ খুঁজে বেড়ায়
২০১৪সালে সুচিত্রা যেদিন মারা যান; সেদিন এক সাক্ষাৎকারে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাহিদ জানিয়েছিলেন, ‘সুচিত্রার মৃত্যুতে তার দাদা ও বাবার মন খারাপ।মন খারাপ তার নিজেরও।’নাহিদের এবক্তব্যের ব্যাখ্যা খুঁজলে সুচিত্রাকে তিন প্রজন্মের নায়িকা বলাই যায়।
পুরো নাম চিত্রা সেন।জন্মগত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তিন মূলত বাংলাও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’জয় করেন।তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে।শোনা যায়, ২০০৫ সালে তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল;কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেননি।২০১২ সালে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক নিবাস।) পাবনা জেলার সদর পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন এক স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী। ১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাঁদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। ১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি।

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

খবর এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন:- ৯১৫৩০৪৩৩৮০