শক্তি বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়  ‘দানা’,  আতঙ্কে প্রহর গুনছে সুন্দরবনবাসী

Uncategorized রাজ্য

হিমাদ্রিশেখর মণ্ডল, সুন্দরবন,বাংলার চাণক্য নিউজ :– ঘূর্ণিঝড়  ”দানা ” তীব্র গতিতে এগোচ্ছে উড়িষ্যা উপকূলের পারাদ্বীপ থেকে বালেশ্বরের দিকে বলেই জানা যাচ্ছে। আজ নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপের জন্ম দিয়েছে ” দানা ” । ওমানের দেওয়া “দানা” এর অর্থ  ” দামী মুক্তো ” । এই ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হচ্ছে সুন্দরবনবাসীর। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল ( I ) স্থলভাগে ঢুকে পড়ার ( Land Fall)  প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।আজ বৃহস্পতিবার রাত ৭,৩০ থেকে ৮,০০টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯.০০ থেকে  ১০.০০ টা পর্যন্ত বলে জানালেন বিশিষ্ট ভূ -বিজ্ঞানী ও নদী বিশেষজ্ঞ ড : সুজীব কর। ইতিমধ্যেই  ” দানা” র গতি রীতিমত বাড়ছে। স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি ঘন্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে । ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে বলে জানালেন ড: কর। তবে ল্যাণ্ডফল যেখানেই হোক না কেন,  ঘূর্ণিঝড়ের ( I ) কে কেন্দ্র করে ২৫০ থেকে  ৩০০ কিলোমিটার এলাকায় ভালরকম প্রভাব পড়ে । সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ তথা সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকায় কিছুটা প্রভাব পড়লেও ভারী কোনও ঘটনা হওয়ার নেই। সমুদ্র উপকূলে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিন মাঝারি থেকে অতি ভারী বৃষ্টিও হবে। তবে এ ব্যাপারে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া, ফেরী সার্ভিসে যাতায়াত চলবে না,  কেননা, সমুদ্র উত্তাল থাকবে ।
সাধারণত বর্ষার বিদায় থেকে শীত শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ( আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর ) ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার অনুকুল পরিস্থিতি থাকে । তাই এই সময় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
       সুজীব কর আরও বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর যেভাবে উষ্ণ হয়ে একের পর এক জোরালো নিম্নচাপের জন্ম দিয়েছে, তাতে সহজেই বোঝা গিয়েছিল সমুদ্রের উষ্ণতা বেশি খাকায় ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তি করবে আজ থেকেই গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুরে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী, কোথাও মারাত্মক ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই ঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত জেলা হবে গাঙ্গেয় বঙ্গের উপকূলবর্তী দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুর। হেমন্তের এই মরশুমে মাঠে পাকা ধান শুরু হয়ে গেছে। তাই ধান কাটার মরশুমে কৃষকদের সাথে পাকা ধানে মই না হয়, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে, সুযোগ থাকলে দ্রুত ফসল কাটতে কম্বাইণ্ড হার্ভেস্টারের সাহায্য নিতে হবে, মাঠে তৈরি হওয়া ফল, সব্জি বা আনাজ তুলে ফেলতে হবে , জমিতে যাতে জল না জমে তার জন্য জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে মাঁচা বা পানের বরজ থাকলে তা শক্ত করে বাঁধতে হবে। আর সবচেয়ে যেটা সুন্দরবনবাসীর আশঙ্কা, সেটা হল দূর্বল নদীবাঁধ।
         উড়িষ্যা উপকূলে ল্যাণ্ডফল হলেও সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমার বিস্তীর্ণ এলাকা সহ কুলতলি, গোসাবা, বাসন্তী, রায়দিঘী, মথুরাপুর যেহারে বেহাল নদীবাঁধ, তাতে করে অবশ্যই রাতের ঘুম কেড়েছে সুন্দরবনবাসীর। উপকূল সংলগ্ন এলাকায় প্রতি কোটালে নদীবাঁধ ভেঙে নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে পাথরপ্রতিমার গোবর্দ্ধনপুর থেকে  গোসাবার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কাকদ্বীপ মহকুমা উপকূলবর্তী এলাকা এই দুয়ারে দূর্যোগে “দানা “র হানা।  বেহাল নদী বাঁধগুলোর মেরামতির কাজ হয় নি গত মহালয়ায় অমাবস্যার কোটাল ও  কোজাগরী পূর্ণিমার কোটালের আঘাতে বিধ্বস্ত নদীবাঁধগুলি। তাই দূর্যোগের আতঙ্রে রয়েছে নামখানার নারায়ণগঞ্জ, ঈশ্বরীপুর, নাদাভাঙ্গা, ফ্রেজারগঞ্জ, মৌসুনী, বালিয়াড়া ছাড়াও সাগরদ্বীপের সুমতিনগর, বঙ্কিমনগর, চকফুলডুবি , ঘোড়ামারা ইত্যাদি অঞ্চলের বাসিন্দারা। এছাড়া গোসাবার সাতজেলিয়া, রাঙ্গাবেলিয়া, কালিদাসপুর, পাখিরালয় ইত্যাদি বিস্তীর্ণ নদী বেষ্টিত অঞ্চলের উপকূলবাসীরা। তাই যত ঘনাচ্ছে দূর্যোগ, ততই চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটছে উপকূলবাসীর বলে এলাকার মানুষের কথা। আবার এই দানার দাপটে সমুদ্রে জলস্ফীতি ঘটবে ১ থেকে ১.৫ মিটার বলে জানালেন ড: কর।  এরফলে কি যে ঘটবে এই বেহাল নদীবাঁধগুলো এবং সেই সঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টির দাপট, তাই নিয়ে এলাকা বাসীর বেশি দুষ্চিন্তা।
              তবে জেলা প্রশাসন, রাজ্য প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সব দিক থেকেই সজাগ রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে। কেননা, দানার আতঙ্ক নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। তাই দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগাম সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। সমুদ্র ও নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রাণহানি, সম্পদহানির পাশাপাশি ধানকাটার মরশুমে কৃষকদের ও মৎস্যজীবিদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ মজুতের ব্যবস্থাও  হয়েছে। বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ সহ জেলা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র ও উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
              সুন্দরবন অঞ্চলে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা ইতিমধ্যে কাকদ্বীপ মহকুমা অফিসে কাকদ্বীপ মহকুমা শাসক মধুসূদন মণ্ডল, কাকদ্বীপ বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সমস্ত বিষয়ের উপর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

খবর এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন:- ৯১৫৩০৪৩৩৮০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *