প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে বৃক্ষকে ভাই ফোঁটা দিল হিমাদ্রি মিশনের মহিলা সদস্যরা

Uncategorized রাজ্য

শমী তরফদার, সন্দেশখালি , বাংলার চাণক্য নিউজ:-  প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের সন্দেশখালি থানার অন্তর্গত দুর্গামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিমাদ্রি মিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল এক ব্যতিক্রমী ভাই ফোঁটা। ভাই ফোঁটার পুণ্যতিথিতে হিমাদ্রি মিশনের মহিলা সদস্যরা এবার বৃক্ষকে ফোঁটা দিয়ে ভাই হিসেবে বরণ করে নিল। কারণ সুন্দরবন অঞ্চলে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন হয়েছে তখনই বৃক্ষ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সেই ঝড়ের গতি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে। এলাকার মানুষ, ঘরবাড়ি এবং নদী বাঁধ রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। তাছাড়া বৃক্ষ পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করে। তাই এবার ভাই ফোঁটার দিন বৃক্ষকে ফোঁটার আয়োজন করে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করল হিমাদ্রি মিশন।
          হিমাদ্রি মিশনের সদস্যা শিক্ষিকা সরস্বতী মণ্ডল বৃক্ষকে ফোঁটার দিয়ে বলেন, ‘আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সুন্দরবন অঞ্চলে  আয়লা, বুলবুল, ইয়াস, আমফান, ফনি প্রভৃতি বড় বড় ঝড় যখন হয়েছে তখন ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রাণপণে সেই ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের বাঁচিয়েছে। বাঁচিয়েছে আমাদের বাড়িঘর। এমনকি যেখানে নদীর চরে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ছিল সেখানে নদীর বাঁধ অনেক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে সুন্দরবনবাসীরা রক্ষা পেয়েছে। তাছাড়া আমরা জানি গাছ আমাদের পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই এবার আমরা গাছকে ভাই ফোঁটা দিলাম। দাদা যেমন যেকোনও বিপদ থেকে তার বোনকে রক্ষা করে তেমনি বোনেদেরও উচিত দাদাকে (বৃক্ষকে) রক্ষা করা। আমরা আজ সকলে শপথ নিচ্ছি, সুন্দরবন অঞ্চলে আর বৃক্ষ ছেদন নয়, এবার থেকে আমরাই বৃক্ষকে রক্ষা করব।’
         হিমাদ্রি মিশনের সভাপতি ডা: গিরীন্দ্র নাথ মণ্ডল বলেন, “সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ বেঁচে থাকলে তবেই তো এলাকায় ভাই ফোঁটা হবে! বিজ্ঞানীরাই বলেছেন সুন্দরবনের আয়ু আর বেশি দিন নেই। সুন্দরবন অঞ্চলকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। তাই সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদকে রক্ষা করতে এবার হিমাদ্রি মিশনের উদ্যোগে বৃক্ষকে ভাই ফোঁটা দেওয়া হল। এর ফলে মানুষের সঙ্গে গাছের সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে।ম কেউ বৃক্ষ ছেদন করতে গেলে বৃক্ষকে তার বোনেরা রক্ষা করবে। হিমাদ্রি মিশন শুধুমাত্র কালী পূজা, সরস্বতী পূজা করে না, বহুবার পুজোর বাজেট ছেঁটে দু:স্থদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আয়লা, আমফান, বুলবুল, ইয়াস-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় আর্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে হিমাদ্রি মিশন। ছোট ছোট শিশুদের হিমাদ্রি মিশনের স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইসব খুদে পড়ুয়াদের বই, খাতা, পোশাক -এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর দুস্থদের মধ্যে নতুন বস্ত্র বিতরণ করা হয়। বিনামূল্যে চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির হয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। সুন্দরবন অঞ্চলের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে ‘সুন্দরবন সৃজন উৎসব’ এর আয়োজন করা হয়। সরকারি কোনও সাহায্য ছাড়াই হিমাদ্রি মিশন সারাবছর এলাকার মানুষের পাশে থাকে।”
      এদিন এই ব্যতিক্রমী ভাই ফোঁটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হিমাদ্রি মিশনের সভাপতি ডাঃ গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডল, সম্পাদক হিমাদ্রিশেখর মণ্ডল, মিশনের সদস্যা শিক্ষিকা মিতা রায়, সরস্বতী মণ্ডল, রীনা মণ্ডল, পূর্ণিমা পাইক, দিপালী সরদার, রেবা সরদার, ভারতী সরদার, বিষ্টু সরদার, তুলশি মণ্ডল,  বৃষ্টি মণ্ডল, সৃষ্টি মণ্ডল, রিয়া মাহাতো, সদস্য নিমাই মাহাতো, সুবোধ সরদার, শংকর গায়েন প্রমুখ। 

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

ADVT

খবর এবং বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন:- ৯১৫৩০৪৩৩৮০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *